- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

শ্রীলন্কা: যুদ্ধ এবং শান্তির মাঝে নবীনরা

বিষয়বস্তু: জনপ্রিয় পোস্ট, শ্রীলন্কা, জাতি-বর্ণ, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, যুবা, শরণার্থী

সায়ান্থন [1] হচ্ছেন সুইজারল্যান্ডে বসবাসরত একজন প্রতিভাবান তামিল ব্লগার যিনি তার আন্ন্দদায়ক পডকাষ্টিং এর জন্যে বিখ্যাত। তার ব্লগ সাধারনত মজার মজার ছোট গল্পে পুর্ন থাকে। আজ তিনি একটি চিন্তামুলক লেখা লিখেছেন যেখানে তিনি নবীন শ্রীলন্কানরা দেশের সাম্প্রতিক সংঘাতকে [2] কিভাবে মোকাবেলা করছেন সে সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।

সায়ন্থনের বিদ্রুপাত্মক লেখাটির [3] অনুবাদ পড়লে আমরা দেখতে পাব যে শ্রীলন্কান শরনার্থী এবং পৃথিবীর অন্যন্য স্থানে যুদ্ধ এবং সংঘাতের কারনে সৃষ্ট শরনার্থীদের মধ্য পার্থক্য কোথায়। সায়ান্থন ব্যাখ্যা করছেন কেন এটি মনে হয় যে নবীন প্রজন্ম শুধু মজা খুঁজে এবং কিভাবে সংঘাতপুর্ণ পরিবেশ এইসব ছেলেমেয়েদের অল্পবয়সের মুল্যবান চারিত্রিক বৈশিষ্টগুলো চুরি করে নিয়েছে। তিনি পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও এরুপ পরিনতি ভবিষ্যতবানী করেছেন। তিনি স্বল্প সময়ের একটি অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন যেখানে শান্তির সম্ভাবনা সংঘাতের মধ্যেও তাকে এবং তার বন্ধুকে আনন্দ এনে দিয়েছে।

আমি এবং আমার বন্ধু ব্লগে মজার বিষয়গুলো নিয়েই ব্যাস্ত থাকি। গুরুজনেরা বলতেন যেনতেন কিছু নয় আমাদের উচিৎ অর্থপুর্ন কিছু করা । কিন্তু তোমরা কি কেউ ভেবেছ আমরা কেন শুধুই মজা করতে ভালবাসি? তোমরা কি কেউ কখনও জানতে চেয়েছ কেন চার দেয়ালে বদ্ধ করে রাখা এই অল্পবয়সীরা কেন একসাথে হলেই ইন্টারনেট বা অন্য কিছুর মাধ্যমে আনন্দের উপকরন খুঁজে?

৪০-৫০ বছর আগ জীবন কেমন ছিল দেখা যাক। রাজনীতর অঙন যদিও উত্তপ্ত ছিল, দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ছিল শান্তিপুর্ন। আজকের বয়স্করা ছিলেন তখনকারদিনের নবীন। তাদের বয়সের সাথে সামন্জস্যপুর্ন বিষয়গুলো করতে তাদের কোনই অসুবিধা হতনা। তাদের একপাল স্কুলের বন্ধু থাকতো যাদের সাথে নিয়ে তারা বড় হতেন। তারা পার্কে, সমুদ্র সৈকতে যেতেন এবং নাটক দেখে সময় কাটাতেন। বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারার অফুরন্ত সুযোগ থাকত। সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার হচ্ছে তারা কোন ভয়ভীতি ছাড়াই ঘুরে বেড়াতে পারতেন।

আমরা কি এই সুযোগ পেয়েছি?

আমরা যখন জন্মেছি- দেশ তখন জ্বলছে। কিন্ডারগার্টেন যাওয়ার সময় আমাদের কার্ফিউর সময়ের দিক লক্ষ্য রাখতে হতো। প্রতি বছর আমাদের অন্যস্থানে আশ্রয় নিতে হতো এবং পুরনো বন্ধুদের হারাতাম। বিদ্যুত ছাড়া দশ বছর, বোমায় বিদ্ধস্ত সিনেমা হল, রাত ৮টার মধ্যে ঘুমাতে যাওয়া, জীবনের কোনই নিশ্চয়তা নেই – আমাদের এই সবের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম কি পেয়েছে এসব?

কিন্তু আমি এসব নিয়ে চিন্তা করিনি কিছুদিন আগে পর্যন্ত, যখন আমরা কিছুকাল শান্তিতে ছিলাম।

তখন ছিল ২০০৪ সালের মাঝামাঝি কোন এক সময়। আমি এবং আমার বন্ধুরা ছিলাম শ্রীলন্কার জাফনায়। জাফনার এই রুপ আমি পূর্বে কখনও দেখিনি। তখন পরিপুর্ন শান্তিময় পরিবেশ ছিল না কিন্তু শান্তির আশা ছিল সবার মাঝে। সেটুকুই পর্যাপ্ত ছিল আমাদের মুখে হাসি ফোটাতে।

আমরা বীচে বসে রুটি এবং মাংশের ঝোল খেতাম, ধরা পরার ভয় ছাড়াই সামরিক ক্যাম্পগুলো অতিক্রম করতাম। দেখতাম দুই প্রতিপক্ষ একসাথে হাসাহাসি করছে। সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের দিকে অনুরাগের দৃষ্টিতে তাকাতাম যারা পরিচয়পত্র দেখতে চাইতেন না। মধ্যরাতে আমরা মদ্যপান করতাম এবং কোন ভয়ভীতি ছাড়াই উচ্চস্বরে রাস্তায় গান গাইতে গাইতে ফিরতাম। অনুরুপভাবে কলম্বোতে কোন চেকপোষ্ট ছাড়াই আমরা বেড়াতে পারতাম। গল এর দিকের বীচে মধ্যরাতের পরে বসে বন্ধুদের সাথে বসে গল্পের জাল বুনতাম। এবং পুলিশের নাগরিক রেকর্ডের বিষয়টি গ্রাহ্য করতাম না।

আমি সেই কয়দিন যুদ্ধবিহীন জীবন উপভোগ করেছিলাম। আমার তখন বিগত দিনগুলো নিয়ে চিন্তা হলো এবং আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের অল্পবয়সী জীবননিয়ে হিংসা হওয়া শুরু হলো।

যুদ্ধ এবং জাতিগত বিভেদ আমাদের জীবন থেকে এইসব সুসময় কেড়ে নিয়েছে। আমাদের মজার অভিজ্ঞতাগুলো আমরা যুদ্ধের কারনে বিসর্জন দিয়েছি। এখন আমি সেই বয়স পার করে এসেছি। তবুও যখনই আমরা ছড়িয়ে যাওয়া বন্ধুরা একত্র হই তখনই আমরা সেই সময়ে ফিরে যাই, শুরু করি অর্থহীন মজা করা। এটাকে আমরা এড়াতে পারিনা।

শান্তি আবার মুখ লুকিয়েছে। আবার শুরু হয়েছে যদ্ধ, মৃত্যু, কিডন্যাপিং, পরিচয়পত্র, বোমা হামলা।

শীলন্কায়্র পরবর্তী প্রজন্ম আমরা যতটুকু পেয়েছি তাও পাবেনা । তারাও হারাবে বন্ধু, আড্ডা, বীচ, পার্ক…

যুদ্ধবিহীন জীবন – কি সুন্দর!